রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ১০:১৯ অপরাহ্ন

শহীদ মিনারে কবি বেলাল চৌধুরীর প্রতি সর্বস্তরের শ্রদ্ধা

শহীদ মিনারে কবি বেলাল চৌধুরীর প্রতি সর্বস্তরের শ্রদ্ধা

নিজস্ব প্রতিবেদকএকুশে পদকপ্রাপ্ত কবি প্রয়াত বেলাল চৌধুরীর প্রতি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন।

 আজ বুধবার সকাল ১১টার দিকে কবির মরদেহবাহী গাড়ি শহীদ মিনারে আসে।

শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এর পর বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, ইমেরিটাস ড. আনিসুজ্জামান, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, আবদুস সোবহান গোলাপ, অসীম কুমার উকিলসহ অন্যান্য নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

এ ছাড়া সেক্টর কমান্ডার ফোরামের কে এম শফিউল্লাহ, সাংবাদিক হারুন হাবিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল চৌধুরী, ইউজিসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান এ কে আজাদ চৌধুরীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা ধারাবাহিকভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও জাতীয় কবিতা পরিষদ যৌথভাবে এ শ্রদ্ধা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

কবি বেলাল চৌধুরীকে শ্রদ্ধা জানাতে এসে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বেলাল চৌধুরী বটবৃক্ষ ছিলেন। বাংলার মাটি-মানুষ ও আকাশ নিয়ে লিখতেন তিনি। তার লেখায় এসব ফুটে উঠেছে। কলকাতায়ও তার জনপ্রিয়তা ছিল। তার মৃত্যুতে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।

সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস জানান, দুপুর ১২টা পর্যন্ত শহীদ মিনারে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি, সংঠনের পক্ষ থেকে কবির প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবেন। পরে জোহরের নামাজের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে কবির প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। কবিকে দাফনের জন্য তার গ্রামের বাড়ি ফেনীর শর্শদি গ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে কবির দাফন সম্পন্ন হবে।

কবি বেলাল চৌধুরীকে শ্রদ্ধা জানাতে সকাল থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার বেদিতে অবস্থান করছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষজন। দেশ বরেণ্য কবিদের পাশি সাংবাদিক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ আত্মীয়-স্বজন ও কবির বন্ধুরাসহ কবিতাপ্রেমী মানুষজন উপস্থিত রয়েছেন।

কবি বেলালের ভাতিজা রফিক-উম-মুনীর চৌধুরী জানান, পল্টন বাসা থেকে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের শেষে ফেনীর শর্শদীতে বেলাল চৌধুরীকে দাফন করা হবে। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে বাদ যোহর তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। বেলা ১২টা পর্যন্ত এ শ্রদ্ধা নিবেদন চলবে। তিনি আরো জানান, একটি ফ্রিজিং গাড়িতে কবি বেলালের মৃতদেহ বাসায় রাখা ছিল।

গতকাল মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১২টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ষাট দশকের অন্যতম এই কবি। কবি বেলাল চৌধুরী ক্রনিক কিডনি ডিজিজ, রক্তশূন্যতা, হাইপোথাইরোটিজসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন। জীবনের শেষ দিনগুলোতে কবি মূত্রনালির সংক্রমণজনিত ‘সেফটিসেমিয়া’ রোগেও ভুগছিলেন।

কবি বেলাল চৌধরী একাধারে কবি, সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক ও সম্পাদক। তিনি লেখালেখির পাশাপাশি পেশাগতভাবে সাংবাদিকতায় ছিলেন দীর্ঘকাল। ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাসের পত্রিকা ‘ভারত বিচিত্রা’ সম্পাদনা করেন ১৫ বছর। দীর্ঘদিন কলকাতায় অবস্থানকালে কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাহিত্য পত্রিকা ‘কৃত্তিবাস’ সম্পাদনা করেন। সেখানে আনন্দবাজারসহ বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করেন। ঢাকায় দৈনিক রূপালী গ্রুপের পত্রিকা সাপ্তাহিক সন্দ্বীপ সম্পাদনা করেন।

কবি বেলাল চৌধুরী ১৯৩৮ সালের ১২ নভেম্বর ফেনী জেলার শর্শদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম রফিকউদ্দিন আহমাদ চৌধুরী এবং মাতার নাম মুনীর আখতার চৌধুরানী।

কবিতা, প্রবন্ধ, অনুবাদ গ্রন্থসহ বেলাল চৌধুরীর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ২২টি। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ হচ্ছে, নিষাদ প্রদেশে (১৯৬৬), বেলাল চৌধুরীর কবিতা (১৯৭৬), আত্ম প্রতিকৃতি, স্থির জীবন ও নিসর্গ (১৯৭৬), স্বপ্নবন্দী, সেলাই করা ছায়া, জলবিষুবের পূর্ণিমা (১৯৮৬), প্রতি নায়কের স্বগতোক্তি, (১৯৮৭), যাবজ্জীবন সশ্রম উল্লাস (১৯৯৭), বত্রিশ নম্বর (১৯৯৭), ভালবাসার কবিতা (১৯৯৭), যে ধ্বনি চৈত্রে শিমূলে প্রভৃতি।

সাহিত্যে অবদানের জন্য কবি বেলাল চৌধুরী রাষ্ট্রীয় পুরস্কার একুশের পদক (২০১৪), বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৪), মাযহারুল ইসলাম কবিতা পুরস্কার, জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার লাভ করেন।

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com